ফেসবুক হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায়। Best 7 Tips for Security & Safety
ফেসবুক হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায়।
বর্তমান যুগ অনলাইন নির্ভর হয়ে গেছে। অনলাইনেও ভালো মানুষের মতো খারাপ মানুষ রয়েছে। যারা হ্যাকিং এর মতো খারাপ কাজ করে থাকে। ফেসবুক হ্যাকিংও তার মধ্যে একটি।
আজকাল অনেক মানুষই ফেসবুক আইডি হ্যাকিং এর শিকার হন। ফেসবুক একটি পার্সোনাল একাউন্ট। যেখানে মানুষের বিভিন্ন ধরনের পার্সোনাল জিনিস থাকে। ফেসবুক হ্যাকিং এর শিকার হলে তার সেই তথ্যগুলো হ্যাকারদের কাছে চলে যায়।
পার্সোনাল চ্যাট, ফটো, ভিডিও পর্যন্ত লিক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আবার অনেকেরই বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ফেসবুকের সাথে লিঙ্ক করা থাকে। যেমন গেমারস রা তাদের ফেসবুক আইডি দিয়ে গেমিং আইডি করে থাকে। যখন তাদের ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়ে যায়। তখন ফেসবুক আইডির সাথে সাথে গেম আইডিও চলে যায়।
গেমারস দের কয়েক বছর ধরে কষ্টে করে খেলে বানানো আইডি গুলো নিমেষেই হারিয়ে যায়। তাছাড়াও অনেকের আরো গুরুত্বপূর্ণ একাউন্ট যেগুলা ফেসবুকের সাথে বাইন্ড করা থাকে। সেগুলো হারিয়ে যেতে পারে।
তাই আমাদের ফেসবুক হ্যাকিং এর হাত থেকে বাঁচার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। তো আজকে আমরা আলোচনা করব ফেসবুক হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায়!
ফেসবুক হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায় গুলো।
১. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা
আমরা বেশির ভাগ মানুষই পাসওয়ার্ড নিয়ে সচেতন নই। পাসওয়ার্ড হিসেবে নিজেদের নাম, ফোন নাম্বার, জন্ম তারিখ এগুলো ব্যবহার করে থাকি। এগুলো খুব সহজেই আন্দাজ করা যায়। তাই এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে যেটা আন্দাজ করা কঠিন।
পাসওয়ার্ড দেওয়ার সময় মিনিমাম ৮ অক্ষরের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন। তবে আমি ১০+ অক্ষরের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করার জন্য সাজেস্ট করব। পাসওয়ার্ডে ইংরেজি শব্দ, নাম্বার এবং স্পেশাল ক্যারেক্টার ব্যবহার করুন। যেমন BangLa456$, shaKiB@65#, @IloveYoU3000।
এগুলো কয়েকটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড এর উদাহরণ। বড় পাসওয়ার্ড ব্যবহার করার জন্য আপনারা চাইলে একটি পছন্দের গানের লাইন, কবিতার লাইন এগুলো ব্যবহার করতে পারেন। যেমন, AmaR_sonar_banGLA।
তবে পাসওয়ার্ডে কোন সময়ই বাংলা শব্দ বা স্পেস ব্যবহার করবেন না।
২. অন্যকোথাও পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করা
আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ এই সকল একাউন্টের পাসওয়ার্ড একই দিয়ে থাকে। যেমন ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড, জিমেইল একাউন্টের পাসওয়ার্ড। গেম একাউন্টের পাসওয়ার্ড সব একই রকম দিয়ে থাকে। আসলে এগুলা করা ঠিক না।
এক্ষেত্রে যদি আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যায়। তাহলে একই পাসওয়ার্ড দিয়ে সে আপনার ফেসবুক একাউন্টও সহ অন্যান্য একাউন্টও হ্যাক করে হয়ে যেতে পারে।
তাই ভিন্ন ভিন্ন একাউন্টের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
৩. নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন
প্রতিমাসে কমপক্ষে একবার করে পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করতে হবে। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই ফেসবুক একাউন্ট তৈরী করার পরে আর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করেন না। যেটা হ্যাক হওয়ার অন্যতম কারণ।
তাই চেষ্টা করবেন মাসে একবার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করার। এক্ষেত্রে মনে রাখার জন্য চাইলে আপনি ক্যালেন্ডারের রিমাইন্ডার দিয়ে রাখতে পারেন।
৪. Remember me ব্যবহার না করা
ফেসবুক সহ আরো বিভিন্ন একাউন্ট লগইন করতে গেলে সেখানে Remember me নামক একটি অপশন থাকে। আমরা সবাই বুঝে হোক বা না বুঝে সেটা অন করে দেই। আসলে সেটা কারণ হলো আপনি যেনো সেই ব্রাউজারে পরে লগইন করতে গেলে আপনাকে আর যেন পাসওয়ার্ড দিতে না হয়।
এটি ব্যবহার করলে আপনার ব্রাউজারে পাসওয়ার্ডটি সেভ হয়ে যায়। যখন আপনারা অন্য কোথাও আপনার ব্রাউজারের কুকিজ পারমিশন দিয়ে দেন। তখন তারা সেখান থেকে আপনার পাসওয়ার্ডটি পেয়ে যায়।
আবার আমরা অন্য ডিভাইসে (বন্ধু, আত্নীয়স্বজনন্দের) আইডি লগইন করি। তখন সেখানে এই অপশনটি ব্যবহার করলে পাসওয়ার্ডটি সেভ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ডিভাইসটির মালিক আপনার পাসওয়ার্ডটি দেখে নিতে পারে।
তাই “Remember me”, “Remember Password” ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন।
৫. লগিন এলার্ট চালু রাখা
লগিন এলার্ট চালু রাখলে আপনার ডিভাইস বাদে অন্য কোথাও লগিন হইলেই আপনাকে নোটিফিকেশন এর মাধ্যমে জানিয়ে দিবে৷
ফেসবুকে লগিন এলার্ট চালু করার জন্য ফেসবুকের Settings অপশনে চলে যান। এরপর Passwords & Security তে গেলেই Get alerts about unrecognized login এ ক্লিক করবেন।
এখানে ২ টা অপশন রয়েছে। প্রথম অপশনে তারা আপনাকে ফেসবুকের নোটিফিকেশন সিস্টেমের মাধ্যমে জানিয়ে দেবে। এবং দ্বিতীয় মাধ্যমে আপনার ইমেইলে নোটিফিকেশন টা নিতে পারেন।
আপনার পছন্দ মত অপশন সিলেক্ট করে চালু করে দিন।
৬. টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু রাখা
টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু রাখলে আপনার ফেসবুক আইডিতে লগিন করার সময় পাসওয়ার্ড দেওয়ার পরও একটা কোড দিতে হয়। যেটা আপনার নাম্বারে, ইমেইলে বা অথেন্টিকেটর এপ থেকে নিতে হয়।
টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করতে Setting→ Password & Security→ Use two-factor authentication। অপশনে গেলেই ৩ টা অপশন পাবেন। তবে বাংলাদেশে প্রথম দুই টাই Authenticator App এবং Text Massage সিস্টেমই চালু আছে।
আপনি দুইটার যেকোনো একটা ব্যবহার করতে পারেন। আমরা অনেকেই Text Massage সিস্টেমটা সম্পর্কে জানি। কিন্তু Authenticator App সম্পর্কে জানিনা।
Authenticator App বলতে একটা এপসকে বোঝাই যেটা সব সময় আপনাকে কোড প্রোভাইড করতে থাকবে। গুগল মাইক্রোসফট সহ আরো কয়েকটি কোম্পানির এই অথেন্টিকেটর অ্যাপ রয়েছে। এগুলাতে প্রতি ১০ সেকেন্ডে কোড আপডেট হতে থাকে।
আপনি তাদের যেকোনো একটা ব্যবহার করতে পারেন। আর অবশ্যই টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু থাকা কালীন ব্যাকআপ কোডগুলো কপি করে নিজের কাছে রেখে দেবেন।
কারণ অনেক সময় দেখা যায় নাম্বারে কোড আসে না। আবার ফোন নষ্ট বা হারিয়ে গেলে Authenticator App পাবেন না।
এটা ফেসবুক হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায় এর সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি।
৭. Trusted Contact চালু রাখা
ফেসবুকের দারুন একটা ফিচার হলো Trusted Contact সিকিউরিটি সিস্টেম। এখানে আপনি চাইলে ৩ জন অথবা ৫ জন কে যুক্ত করে রাখতে পারবেন। যারা আপনার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়ে গেলে আপনার আইডিটি উদ্ধারের জন্য সাহায্য করতে পারবে।
তাছাড়াও আপনি মারা গেলে আপনার আইডি বন্ধ বা Remembering করে দিতে পারবে। আপনার কাছের বন্ধু অথবা আত্মীয়-স্বজনদেরকে সেখানে যুক্ত রাখতে পারেন।
অন্যান্য ফেসবুক হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায়
- অপরিচিত ব্যক্তিদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট না করা। তাদের সাথে কথা না বলা।
- নিজের ব্যক্তিগত কোনো কিছু অন্যদের সাথে শেয়ার না করা।
- নিজের প্রোফাইলের ফটো প্রাইভেসি “Friends” করে রাখা। অথবা প্রোফাইল লক রাখা।
- কোনো প্রকার স্প্যাম বা ফিশিং লিংকে প্রবেশ না করা।
- বিশ্বস্ত কোনো ওয়েবসাইট না হলে সেখানে ফেসবুক আইডি দিয়ে একাউন্ট ক্রিয়েট না করা।
- আপনার ব্যবহৃত ডিভাইস সবসময় ভাইরাস মুক্ত রাখা।
- প্লে স্টোর এর বাইরে থেকে এপস ইন্সটল করার সময় সর্তক থাকা।
- এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা এবং সকল সফটওয়্যার গুলো আপডেট রাখা।
নোটঃ ফেসবুক আইডিতে নিজের রিয়েল নাম, ছবি, নাম্বার, ইমেইল, জন্ম তারিখ, ঠিকানা ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। এতে করে আপনার আইডি হ্যাক হলেও ফিরিয়ে আসতে সুবিধা হয়। বেশিরভাগ হ্যাক হয়ে যাওয়া আইডি ফিরিয়ে নিয়ে আসা যায়না মেইল যুক্ত না থাকার কারণে।
অবশ্যই আপনার আইডিতে একটি ইমেইল যুক্ত করে ভেরিফাই করে রাখবেন। সম্ভব হলে নিজের NID বা পাসপোর্ট দিয়ে একাউন্টটা ভেরিফাই করে রাখবেন।
মনে রাখবেন আপনার সচেতনতাই আপনার ফেসবুক হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায়।
তো এই ছিলো ফেসবুক হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায় গুলো। উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করলে আশা করা যায় আপনার ফেসবুক হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায় কাজে লাগবে।
তো আজ এপর্যন্তই। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। দেখা হবে পরে আর্টিকেলে।
আরও পড়ুন,
অ্যাপস মূলত কি! সেরা ৭ দরকারি অ্যাপস।
ইন্টারনেট রচনা। ক্লাস 6-12। (১০০% কমন)
ভিপিএন কি? ভিপিএন এর কাজ কি? Free VPN 2024
বানিয়ে ফেলুন নিজের TV Channel ওয়েবসাইট। আর খেলা দেখুন ঝামেলা ছাড়া।
# হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায় ।