ভিপিএন কি? ভিপিএন এর কাজ কি? Free VPN 2024
আজকে আমাদের আলোকের বিষয় হলো ভিপিএন কি? ভিপিএন এর কাজ কি? ভিপিএন ব্যবহারের সুবিধা-অসুবিধা। তো চলুন তাহলে শুরু করা যাক,
ভিপিএন কি?
ভিপিএন (VPN) হলো Virtual Private Network। ভিপিএন মূলত ইউজারের আইপি এড্রেস লুকাতে ব্যবহার করা যায়। ভিপিএন ব্যবহার করে আপনি চাইলে যেকোনো দেশের আইপি ব্যবহার করতে পারেন। যেমন আপনি বাংলাদেশে বসেই আমেরিকার আইপি এড্রেস ব্যবহার করতে পারেন। ভিপিএন মূলত ইউজার এবং ওয়েবসাইট এর মধ্যে একটা থার্ড পার্টি হিসেবে কাজ করে।
ভিপিএন এর কাজ কি?
ভিপিএন এর কাজ নিয়ে আমাদের মধ্যে একটা ভুল ধারণা আছে। আমরা মনে করি ভিপিএন শুধু খারাপ বা অনৈতিক কাজেই ব্যবহার করা হয়। আসলে বিষয়টা এমন না। ভিপিএন তৈরি করা হয়েছে ইউজারদের আইপি এড্রেস, ডাটা, লোকেশন হাইড করার। যেনো ইউজারগণ তাদের পরিচয় গোপন রেখে কাজ করতে পারে।
ভিপিএন এর কাজ সাধারণত ব্লকড ওয়েবসাইটগুলোতে ভিজিট করতে ব্যবহার করা হয়। যেমন ধরুন বাংলাদেশ থেকে Darkweb এর ওয়েবসাইট গুলো ভিজিট করা যায়না। তখন আপনি ভিপিএন ব্যবহার করে সেই ওয়েবসাইট গুলো ভিজিট করতে পারবেন।
তাছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশে পাবজি, ফ্রি ফায়ার গেমগুলো ব্যান। যার ফলে গেমারসরা ভিপিএন ব্যবহার করে গেমস গুলো খেলতে পারছে।
ভিপিএন ২ ভাবে পাওয়া যায়। প্রথমটা হলো ফ্রি ভিপিএন এবং দ্বিতীয়টা হলো পেইড ভিপিএন।
১. ফ্রি ভিপিএনঃ নাম শুনেই বুঝতে ফ্রি। অর্থাৎ ব্যবহার করতে কোনো টাকা পয়সা দিতে হয়না। সম্পূর্ণ ফ্রিতেই ব্যবহার করা যায়। প্লেস্টোরে এমন অনেক ফ্রি ভিপিএন রয়েছে। তাদের মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি হলো Super VPN, Turbo VPN, Secure VPN, 1.1.1.1 ইত্যাদি।
তবে এগুলাতে সার্ভার লিমিট করা থাকে এবং বেশিরভাগ ফ্রি ভিপিএন ব্যবহার করার জন্য এডস দেখতে হয়। আবার অনেক ভিপিএন গুলা সময় নির্ধারণ করে দেয়। নির্দিষ্ট সময় পর একাই ডিসকানেকটেড হয়ে যায়। তারপর আবার নতুন করে কানেক্ট করতে হয়।
২. পেইড ভিপিএনঃ এই ভিপিএন গুলো ব্যবহার করতে টাকা পে করতে হয়। কিছু কিছু ভিপিএনে একবার টাকা দিয়ে কিনলেই লাইফটাইম ব্যবহার করা যায়। আবার কিছু কিছু ভিপিএন সাবস্ক্রিপশন আকারে, মাসিক বা বাৎসরিক ভাবে পে করতে হয়। পেইড ভিপিএন গুলোতে কোনো সার্ভার লিমিট করা থাকে না। ফলে ইচ্ছামতো যেকোনো কান্ট্রি সিলেক্ট করে কানেক্ট করা যায়।
পেইড ভিপিএন গুলো ফ্রি ভিপিএন এর তুলনায় অনেক বেটার সার্ভিস দেয়। বিশেষ করে ইউজারদের আইপি এড্রেস খুব ভালোভাবে হাইড করে দেয়। যেটা ফ্রি ভিপিএন গুলো পারে না। আবার পেইড ভিপিএন গুলো সম্পূর্ণ এডস ফ্রি। পেইড ভিপিএন গুলাতে কোনো টাইম লিমিট দেওয়া থাকেনা। যার ফলে আপনি যত ইচ্ছা একটানা ব্যবহার করতে পারবেন। জনপ্রিয় কয়েকটি পেইড ভিপিএন হলো Express VPN, Nord VPN, Panda VPN, HMA VPN ইত্যাদি।
কিভাবে ভিপিএন ব্যবহার করবেন?
ভিপিএন ব্যবহার করার আগে অবশ্যই আপনার পছন্দমত ভিপিএন ডাউনলোড করে ইন্সটল করে নিতে হবে। আপনি চাইলে আপনার পছন্দ মতো ফ্রি অথবা পেইড ভিপিএন ব্যবহার করতে পারেন। গুগল প্লেস্টোরেই সকল রকমের ভিপিএন পেয়ে যাবেন।
এরপর ভিপিএন এপসটিতে প্রবেশ করুন।
দেখতে পাবেন এখানে আপনার সার্ভার সিলেকশনের অপশন রয়েছে।
আপনি চাইলে আপনার পছন্দমত সার্ভার সিলেক্ট করে নিতে পারেন অথবা আপনি অটো সার্ভার দিয়েও রাখতে পারেন। এরপর Connect/Start অপশনে ক্লিক করবেন।
প্রথমবার ভিপিএন কানেক্ট দেওয়ার সময় পারমিশন চাইতে পারে, সেটা দিয়ে দিবেন।
ব্যাস আপনার ভিপিএন কানেক্ট হয়ে গেছে। এখন চাইলে আপনি আপনার কাজটি করতে পারেন।
কিভাবে বুঝবেন আপনার ভিপিএন কানেক্ট হইসে কিনা?
ভিপিএন কানেক্ট করার সাথে সাথেই কানেক্টেড (Connected) লেখা উঠবে। আপনার মোবাইলের নোটিফিকেশন বারেও সেটা শো করবে। ফোনের স্টাটাস বারেও চাবির মতো একটা চিহ্ন ভেসে উঠবে। তখনই বুঝে নিবেন আপনার ভিপিএন টি কানেক্ট হয়ে গেছে। কিন্তু এখন দেখার বিষয় হলো যে আপনার আইপি অ্যাড্রেস চেঞ্জ হয়েছে কিনা!
এর জন্য আপনাকে একটা ওয়েবসাইটে যেতে হবে। ওয়েবসাইটটি হলো https://whoer.net। এই ওয়েবসাইটে গেলে আপনার আইপি এড্রেস সম্পর্কে সকল তথ্য চলে আসবে। আপনার Intenet Provider, Operating System, Browser, DNS ইত্যাদি।
এখানে আপনার DNS এ খেয়াল করবেন আপনাকে আপনার দেশ কি দেখাচ্ছে? আপনাকে যদি বাংলাদেশ দেখায় তাহলে বুঝতে পারবেন আপনার ভিপিএন টি সঠিকভাবে কানেক্ট হয়নি। আর যদি আপনার কানেক্টকৃত দেশটি দেখায় তাহলে বুঝবেন আপনার ভিপিএন টি সঠিকভাবে কাজ করছে।
ভিপিএন ব্যবহারের সুবিধা
১. ভিপিএন ব্যবহার করে খুব সহজেই নিজের আইপি অ্যাড্রেস এবং লোকেশন লুকিয়ে ফেলা যায়।
২. ভিপিএন আপনার ডাটা ইনক্রিপ্ট করে রাখে, ফলে আপনার ডাটাগুলো আর হ্যাকারদের হাতে চলে যায় না।
৩. ব্যান ওয়েবসাইট গুলোতে প্রবেশ করা যায়। এমন অনেক প্রয়োজনীয় ওয়েবসাইটগুলো থাকে যেগুলো ভৌগোলিক কারণে আমাদের সাধারণ আইপি অ্যাড্রেস দিয়ে ঢোকা যায় না। তখন ভিপিএন ব্যবহার করে খুব সহজে সে ওয়েবসাইটগুলোতে ভিজিট করতে পারবেন।
৪. বিভিন্ন গেমস খেলার সময় গেমে ঢোকা, ম্যাচ স্টার্ট ইত্যাদি সমস্যা সমাধান করার জন্য ভিপিএন ব্যবহার করা যায়।
ভিপিএন ব্যবহারের অসুবিধা
১. ভিপিএন ব্যবহারের সময় আপনার ব্রাউজিং স্পিড কমে যায়।
২. ডিভাইস অনেক ভারী হয়ে যায়। যার ফলে হিটিং ইসুও দেখা দেয়।
৩. কিছু কিছু ভিপিএন আবার ইউজারদের ডাটাও চুরি করে থাকে।
৪. ফ্রি ভিপিএন ব্যবহার করার সময় এডস দেখতে হয় যেটা খুবই প্যারা দায়ক।
ভিপিএন এর ভালো খারাপ দুটো দিকই আছে। আপনি ব্যবহার করবেন কিনা বাকিটা আপনার ইচ্ছা।
ভিপিএন ব্যবহার করলে স্পিড বারে নাকি কমে?
সাধারণত ভিপিএন ব্যবহার করলে স্পিড কমে। বিশেষ করে ফ্রি ভিপিএন গুলো ব্যবহার করলে। তবে কিছু কিছু ভিপিএন ব্যবহার করে সত্যিই স্পিড বারানো সম্ভব। অনেকেই ভিপিএন ব্যবহার করে BDIX বাইপাস করে থাকেন। বাংলাদেশি অনেক ওয়াইফাই ইউজারই ভিপিএন ব্যবহার করে তাদের ইন্টারনেট স্পিড বেরিয়ে থাকেন।
আমার মতামত
আপনাদের অনেকেই ভাবতে পারেন আমি কি ভিপিএন ব্যবহার করি! আমি মূলত একটা প্রিমিয়াম ভিপিএন ব্যবহার করি। যেটা নাম Keepsolid VPN Unlimited। এটা প্লেস্টোরেই পাওয়া যায় PlayStore Link। আমি এটা কিছুদিন আগে একটা অফারে ৬ মাসের জন্য একদম ফ্রিতে নিয়েছিলাম। এটা এখনো পর্যন্ত কোনো প্রকার সমস্যা ছাড়াই ব্যবহার করছি।
এখন আপনাদের যাদের টাকা দিয়ে কেনার সামর্থ্য নেই। অথবা আবার যাদের আমার মতো পেইড ভিপিএন ফ্রিতে নেওয়া ভাগ্যও নেই, তারা কি করবেন!
আপনারা গুগলের দেওয়া নিজস্ব ফ্রি ভিপিএন ব্যবহার করতে পারেন। এটা সম্পূর্ণ ফ্রি এবং এডমুক্ত। তাছাড়াও এটা ব্যবহারে কোনো লিমিটেশন নেই। তবে এটাতে শুধু একটাই সার্ভার রয়েছে। সেটাও গুগলের ক্লাউডফ্লেয়ার (Cloudflair) সার্ভার। এটা ব্যবহার করা ১০০% নিরাপদ। যেহেতু এখানে স্পেসিফিক ভাবে কোনো রিজিওন দেয় না ফলে অনেক সময়ই কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া যায় না। এটার ব্যবহার নিয়মও অন্যান্য ভিপিএন এর মতো।
আশা করি আপনারা ভিপিএন কি? ভিপিএন এর কাজ কি? ভিপিএন কিভাবে কাজ করে? বুঝতে পেরেছেন। তো আজ এপর্যন্তই। এমন নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।
আরও পড়ুন,
One Comment