ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় ওয়েব সিরিজ নামটি অনেকেই শুনে থাকবেন। আবার অনেকেই ওয়েব সিরিজ দেখেও থাকবেন। কিন্তু আপনারা জানেন কি ওয়েব সিরিজ মানে কি?

ওয়েব সিরিজ কি? (Web series)

ওয়েব সিরিজ হলো স্ক্রিপ্টেড অনলাইন ভিডিও গুলোর একটি সিরিজ। যেটা ওয়েব শো (Web show) নামেও পরিচিত। সাধারণত ওয়েব সিরিজ গুলো এপিসোড আকারে প্রকাশ করা হয়।

ওয়েব সিরিজ গুলো ৯০ দশকের পর থেকে খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করে। সাধারণভাবে ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট এবং স্মার্টফোন সহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ওয়েব সিরিজ দেখা যায়। ওয়েব সিরিজ বলতে আমরা অনেকেই ১৮+ বা এডাল্ট জিনিসকে বুঝে থাকি। আসলে এরকম কিছু না।

তবে হ্যাঁ, হলিউডের বা বাইরের দেশের অনেক ওয়েব সিরিজ গুলোতে ১৮+ সিন থাকে। যেটা স্বাভাবিক এবং বিভিন্ন মুভিতেও এটা লক্ষ করা যায়।

ওয়েব সিরিজ মূলত ধারাবাহিক নাটক গুলোর মতো হয়ে থাকে। একটা ওয়েব সিরিজ এর কয়েকটি করে সিজন থাকে। এবং প্রতিটি সিজনে কয়েকটি করে এপিসোড থাকে।

ওয়েব সিরিজ কিভাবে দেখা যায়?

ওয়েব সিরিজ গুলো মূলত বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম গুলোতে রিলিজ দেওয়া হয়। যেমন Netflix, Amazon Prime, Disney, Hoichoi, Bongo । ওয়েব সিরিজ দেখার জন্য দুইটা উপায় রয়েছে। একটি হলো ফ্রি এবং আরেকটা পেইড।

পেইড ভার্সনগুলোতে আপনাকে সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। সাবস্ক্রিপশন গুলো সাত দিন, এক মাস এবং এক বছরের পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই সাবস্ক্রিপশন থাকা কালীন ওই প্লাটফর্মে থাকা সকল ওয়েব সিরিজ গুলোর এক্সেস আপনি পেয়ে যাবেন।

সাবস্ক্রিপশন থাকাকালীন আপনার পছন্দমতো সব ওয়েব সিরিজ গুলো আপনি দেখে নিতে পারবেন। আর ফ্রিতে যে ওয়েব সিরিজ গুলো দেওয়া থাকে। সেগুলো দেখার জন্য কোন প্রকার টাকা দিতে হবে না। আপনি সম্পূর্ণ বিনামূল্য সেগুলো দেখে নিতে পারেন।

সেরা ৩ টা ওয়েব সিরিজ

ওয়েব সিরিজ

গেম অফ থ্রোনস (Game of Thrones)

গেম অফ থ্রোনস সিরিজটির IMDB রেটিং ৯.২ এবং ৯২% গুগল ব্যবহারকারী এটাকে পছন্দ করেছেন। এই সিরিজটি ২০১১ থেকে ২০১৯ প্রায় ৮ বছর ধরে স্ট্রিমিং হয়েছে।

বর্তমানেও এটি জনপ্রিয় একটা সিরিজ। ইদানিং ফেসবুকের গ্রুপগুলো এবং অনলাইনের বিভিন্ন প্লাটফর্ম এও আলোচিত হচ্ছে। যদিও আমি নিজেই এটা দেখে এখনো শেষ করতে পারি নি। কেবল ৩-৪ টা এপিসোডও দেখেছি।

গেম অফ থ্রোনস সিরিজটিতে মোট ৮ টা সিজন এবং মোট ৭৩ টি এপিসোড রয়েছে। মূলত এই সিরিজটি ফ্যামিলি ড্রামা নিয়ে গঠিত। এবং এটা রাজা বাদশাদের আমলের কাহিনি। যা প্রায় ২০০-৩০০ বছর আগের ঘটনাবলী নিয়ে গঠিত। এখানে নারীদের শোষণ, নির্যাতন, নিপিড়ন দেখানো হয়েছে।

তাছাড়াও প্রধান চরিত্র (যাকে মাদার অফ ড্রাগন) বলা হয় তাকে নিয়েই সিরিজটি এগিয়ে গেছে। তার নিপিরনের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানো দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। তাছাড়াও প্রচুর একশন, রোমান্টিক, এডভেঞ্চার তো থাকছেই।

সিরিজটি দেখার জন্য অবশ্যই আপনাকে ধৈর্যশীল হতে হবে। তাই যাদের সময় আছে এবং ধৈর্য্য ভালো তারা দেখে নিতে পারেন। গেম অফ থ্রোনস সিরিজটি HBO থেকে দেখতে পারবেন।

বেশিরভাগ এপিসোড গুলো হিন্দিতে থাকলেও শেষের দিকে কয়েকটি নেই। এগুলা চাইলে ইংরেজিতেও দেখে নিতে পারেন।

বি.দ্রঃ সিরিজটির কিছু কিছু এপিসডে ১৮+ সিন রয়েছে।

মানি হেইস্ট (Money Heist)

সিরিজটির IMDB রেটিং ৮.৩ এবং ৯৬% গুগল ব্যবহারকারী এটাকে পছন্দ করেছেন। আমার সবচেয়ে পছন্দের ওয়েব সিরিজ মানি হেইস্ট। এটা ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত স্ট্রিমিং হয়।

ওয়েব সিরিজটি স্পেনের এক্টরদের দ্বারা শুটিং করা হয়। যেহেতু সিরিজটির মেইন ভাষা ছিলো স্প্যানিশ। তাই সিরিজ নির্মাতারা নেটফ্লিক্স (Netflix) মাধ্যমে অন্যান্য ভাষায় বিশ্বব্যাপী লঞ্চ করে।

মানি হেইস্ট সিরিজটি ক্রিমিনালদের কাহিনী নিয়ে গঠিত। প্রথমে তারা রয়েল মিন্টে (Royal Mint) হামলা করে। তাদের দল নেতা হিসেবে একজন প্রফেসর থাকেন। যিনি একটি দলকে (চোরের দলকে) পরিচালনা করেন। তার বুদ্ধিমত্তা দেখলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। তার কাছে প্রত্যেক সমস্যার সলিউশন ছিল।

রয়েল মিন্ট হলো মুদ্রা ছাপাখানা। যেটাকে তারা বন্দী করে নেয়। এবং সেখান থেকে প্রচুর মুদ্রা তৈরি করে নিয়ে দেশ থাকে ফারার হয়ে যায়। এটা ছিল সিজন ১ এবং ২ এর ঘটনা।

সিজন ৩ এ দেখা যায় তারা ব্যাংক অফ স্পেন (Bank of Spain) কে হাইজ্যাক করে। মূলত এই ব্যাংক ডাকাতির কারণ হলো তাদের সহকর্মীকে উদ্ধার করা। যে স্পেনের পুলিশদের হাতে ধরা খেয়ে যায়। বাকি গল্প টুকু জানার জন্য অবশ্যই আপনাকে সিরিজটি দেখতে হবে।

সত্যি কথা বলতে আপনি সিরিজটি দেখলে তাদের ফ্যান হয়ে যাবেন। প্রতিটা ক্যারেক্টর আলাদা আলাদা করে বিল্ড আপ করা হয়েছে। যার কারণে আপনি তাদের সাথে ইমোশনালি কানেক্ট হয়ে যাবেন।

বেশি কিছু বললে স্পয়লার হয়ে যাবে। আপনি চাইলে সিরিজটি নেটফ্লিক্স থেকে ইংরেজি অথবা হিন্দিতে দেখে নিতে পারেন।

সিরিজটি যদিও শেষ হয়ে গেছে। তারপরও এটার সিকুয়েল হিসেবে Berlin ক্যারেক্টর নিয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে “Berlin” নামে আরেকটা সিরিজ আসার কথা।

বি.দ্রঃ এই সিরিজটি তেও ২,৩ টা এপিসোডে ১৮+ সিন রয়েছে। তাছাড়াও আর কোনো নেগেটিভ দিক নেই।

স্কুয়িড গেম (Squid Game)

সিরিজটির IMDB রেটিং ৮.০ এবং ৯২% গুগল ব্যবহারকারী এটাকে পছন্দ করেছেন। স্কুয়িড গেম সিরিজটি মূলত একটি কোরিয়ান ওয়েব সিরিজ। যেটা নেটফ্লিক্স এর মাধ্যমে স্ট্রিমিং করা হয়।

সিরিজটি এমন একটা কাহিনি নিয়ে রচিত। যেখানে

এমন এক খেলা যে খেলায় পরাজিত অংশগ্রহণকারীদের মেরে ফেলা হয়। আর যে চূড়ান্তভাবে জয়ী হয়, সে পায় ৪৫.৬ বিলিয়ন কোরিয়ান টাকা।

অর্থ ছাড়া আমাদের জীবন অর্থহীন। সিরিজটির মাধ্যমে এটাই প্রকাশ করা হয়েছে। যাদের জীবনে প্রচুর অর্থ আছে, তাদের কাছে জীবন হয়ে উঠেছে ‘অর্থ অনর্থের মূল’ প্রবাদটির মত।

সিরিজটি কাহিনি

৪৫৬ জন ব্যক্তি মিলে একটা খেলা শুরু করলো। প্রথম পর্বের খেলা শেষে পরাজিত অর্ধেক অংশগ্রহণকারীকে মেরে ফেলা হলো। জয়ী ব্যক্তিরা বেঁচে গেলেও তারা প্রচন্ড ভয় পেলো। তারা এই গেম আর খেলতে না চাইলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হলো।

কিছুদিন যাওয়ার পর ওই অর্থের লোভে তারা ওই গেম খেলার আগ্রহ অনুভব করে। জীবন ও মৃত্যুর সেই খেলায় আবারও জড়িয়ে পড়লো।

সমস্ত অর্থ জয়ী মানুষটি কি নিজের চোখের সামনে এত মানুষের মৃত্যুকে সহজে মেনে নিতে পারবে? ওই অর্থ দিয়ে আরামে আয়েশে জীবন কাটাবে না কি তাকে ঘিরে থাকবে যন্ত্রণার এক জীবন?

মানসিক দ্বন্দ্ব ও অর্থের নানা খাত সংঘাতের চিত্র ফুটে উঠেছে এই সিরিজটিতে। পুরোটা সময় ছিলো টানটান উত্তেজনায় ভরপুর। প্লট সুন্দর হলে সমস্ত কিছু সুন্দর লাগে। এই সিরিজের প্লট অসাধারণ। সাথে ছিলো দুর্দান্ত অভিনয়, এডিটিং, কম্পোজিশন।

সিরিজটিতে একটি মাত্র সিজন রয়েছে, যেটাতে ৯ টি এপিসোড রয়েছে। তবে এটার পরবর্তী সিজন নিয়ে কাজ চলছে। খুব শীগ্রই আপডেট চলে আসবে।

স্কুয়িড গেম সিরিজটি নেটফ্লিক্স এর মাধ্যমে হিন্দি বা ইংরেজিতে দেখে নিতে পারবেন।

আমার মতামত

৩ সিরিজই অনেক জনপ্রিয়। তবে এদের মধ্যে মানি হেইস্ট আমার সবচেয়ে পছন্দের। প্রতিটি ক্যারেক্টর এবং তাদের এক্টিং সব কিছু রিয়েস্টিক। আপনি সিরিজটি দেখতে বসলে শেষ না করে উঠতেই পারবেন না। সিরিজটি এভাবেই বানানো। আপনার এক প্রকার আসত্তি কাজ করবে। তাই এটা আমার পছন্দের ওয়েব সিরিজ।

আপনার কোনটা পছন্দের ওয়েব সিরিজ সেটা অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।

আজ পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকবেন আর নতুন আর্টিকেল আসা পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকবেন।

আরও পড়ুন,

ভিপিএন কি? ভিপিএন এর কাজ কি?