ফ্রিল্যান্সিং কি? কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করব ২০২৫

টপিক

ফ্রিল্যান্সিং: আমার যাত্রা এবং অভিজ্ঞতা

আমি এ.জে সাব্বির, একজন ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলোপার। এবং ২০২০ থেকে ফাইভার মার্কেটপ্লেস এ লেভেল ২ সেলার হিসাবে আছি। এই দীর্ঘ ৪ বছরের, জার্নি তে, অনেক কিছু শিখেছি এবং অনেক সময় এত পরিমাণ হতাশায় ভুগছিলাম যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। তবে আপনারা যারা বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চাচ্ছেন ও শিখতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য আমার এর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং আমার হতাশা ও বিপদের সময় নেওয়া পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয় গুলো আপনাদের ফ্রিল্যান্সিং জগতে পা দেওয়ার পথে অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে আসা করি।

আমি ফ্রিল্যান্সিং শুরুর আগে নিজের যাত্রা শুরু করি ব্লগিং দিয়ে। প্রথমে আমার কাছে তেমন কোন রিসোর্স ছিল না৷ যেমন না কোনো ভাল ফোন, না ল্যাপটপ, কম্পিউটার। তাই আমি ব্লগিং করে ইনকাম করার জন্য চেষ্টা করি। দীর্ঘ ১ বছর পর ইনকামের মুখ দেখতে পাই। ২ মাসে ২০০$ (১৮০০০৳) ২০২০ সালে ইনকাম করি। এরপর আর পেছনে দেখতে হয়নি৷ নিজের কম্পিউটার বিল্ড করে কাজ শুরু করি।

ফ্রিল্যান্সিং: আধুনিক যুগে ইনকামের সহজ মাধ্যম

আধুনিক যুগে একটি কথা অনেকদিন ধরে চারিপাশে শোনা যায়, সেটি হচ্ছে অনলাইনে কিভাবে ইনকাম করা, খুব সহজে ঘরে বসে কিভাবে ইনকাম করা যায় ইত্যাদি। মানে নিজের একটি ইনকামের ওপর নির্ভর না করে আরও একটি পার্ট টাইম বা বেকার হলে ফুল টাইম ইনকামের ব্যাবস্থা করা ঘরে বসেই। আপনি যদি চাকরী করে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য, অন্য আরেকটি চাকরী সামলানো খুবই মুশকিল হবে।

ফ্রিল্যান্সিং কেন জনপ্রিয়?

বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং হলো ওনলাইনে উর্পাজন করা সবচেয়ে সহজ মাধ্যম, কারণ সরাসরি অন্য একটি চাকরিতে গেলে টাইম ম্যানেজ করার একটা ব্যপার আছে। পৃথিবীর অনেক মানুষই চাকরীর পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করে এবং অনেকেই এর মাধ্যমে ছোট-বড় কোম্পানি গুলোতে কাজ করেন।

ফ্রিল্যান্সিং কাজটি এখন সবার কাছেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, এবং আমাদের দেশেও ফ্রিল্যান্সারদের হার বেড়ে গেছে, তাই প্রতিযোগিতা ও অনেক। ফ্রিল্যান্সিং এ শুধুই দক্ষতা আর বুদ্ধি দিয়েই কাজ করা লাগে। এতে আপনার ক্যারিয়ার গঠন অনেক সহজ হয়ে যাবে, কারণ এখানে একজন ক্লায়েন্ট ফিরিয়ে দিলেও আপনি অন্য একটি ক্লায়েন্ট এর কাছে যেতে পারেন। ক্লায়েন্টদের কাজ করে আপনি মাসে অনেক টাকা আয় করতে পারবেন।

নতুনদের জন্য পরামর্শ

তবে অনেক মানুষই এই কাজে নেমে গেছে, যার কারণে প্রতিযোগিতা ও বেড়ে গেছে। সে জন্য এই পেশাটিতে কাজ পাওয়া টাও খুবই কঠিক হয়ে পড়ছে। তাই এই পেশাটি করতে হলে নিজের যোগ্যতা ও স্কিল দিয়ে আপনার একটু শক্ত অবস্থান তৈরি করতে হবে।

অনেকে এই ফ্রিল্যান্সিং কাজটি শিখতে চান, নতুনেরা তো একদমই জানেন না, কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং কাজটি করা লাগে। এবং কোথা থেকে কাজটি শুরু করবেন। তবে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। যারা এই ফ্রিল্যান্সিং কাজটি করতে চান এবং এই কাজটির বিষয়ে জানতে চান, তাদের সবার জন্য এই পোস্টটি করা হলো।

আজকে এই পোস্টে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে সকল তথ্য দেওয়া হবে।

ফ্রিল্যান্সিং কি? ঘরে বসে কি আসলেই ফ্রিল্যান্সিং করা যায়?

কোন প্রতিষ্ঠান এর সাথে যুক্ত না হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করাকে ফ্রিল্যান্সিং বলে। ফ্রিল্যান্সাররা কখনো ৯-৫ টার চাকরি করে না, তারা নিজেদের স্বাধীনমত কাজ করে থাকে। ফ্রিল্যান্সিং কাজে অফিসের সময়সূচি বলতে কিছু নেই, নিজেদের সুবিধামত কাজ করা যায়।

ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে আপনি বাংলাদেশের বাইরে থেকেও কাজ করতে পারবেন। এই কাজটির অনেক সুবিধা রয়েছে।

ফ্রিল্যান্সার কারা?

ফ্রিল্যান্সিং কাজ যারা করেন, তারাই ফ্রিল্যান্সার। ফ্রিল্যান্সাররা কোনো প্রতিষ্ঠানে ফুলটাইম কর্মী না হয়েও একাধিক প্রতিষ্ঠানে সেবা দিতে পারেন। তারা একসাথে অনেক প্রজেক্টের কাজ করতে পারেন। আপনি কয়টা কাজ করবেন বা কোন কাজ করবেন না, সেটি পুরোপুরি ফ্রিল্যান্সারের উপর নির্ভর করে। কারণ ফ্রিল্যান্সাররা কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নয়, তারা নিজেদের ইচ্ছামত কাজ করেন। এজন্য তারা অন্যান্য চাকুরিজীবীদের মতো স্বাস্থ্যবিমা এবং অবসর ভাতার সুবিধাগুলো পান না।

এবার কথা হচ্ছে, একটি কোম্পানিতে কেন ফ্রিল্যান্সিং দরকার হয়? ধরুন, আপনি একটি কপির দোকান দিয়েছেন। এখন আপনার দরকার একটি লোগো। এই একটি কাজের জন্য কি পুরো মাসের বেতন দিয়ে একজন কর্মচারী রাখবেন? অথবা ধরুন, আপনার একটি ডিজাইনার দরকার সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করার জন্য। কিন্তু এই কাজটির জন্য কি আপনি পুরো মাসের বেতন দিয়ে কাউকে রাখবেন? নাকি এমন কাউকে নিবেন, যিনি আপনার সব ছবির ডিজাইন দ্রুত রেডি করে দেবেন? অবশ্যই আপনি এমন কাউকে রাখতে চাইবেন। এই জন্য আপনি চাইলে বাংলাদেশের বাইরে থেকেও ফ্রিল্যান্সারদের দিয়ে কাজ করাতে পারবেন।

এবং এটিই হলো ফ্রিল্যান্সিংয়ের একটি সুবিধা। এখন আপনি বুঝতে পারছেন, ঘরে বসে পৃথিবীর সমস্ত কাজ ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে করা সম্ভব। যারা আপনাকে কাজ দিবে, তারা হলো ক্লায়েন্ট। আর ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজগুলোকে আপনি প্রজেক্ট বা গিগ বলবেন।

ফ্রিল্যান্সারদের কিছু ধরন

ফ্রিল্যান্সাররা পার্টটাইম এবং ফুলটাইম ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকেন। চলুন সে বিষয়ে জানা যাক:

  • মুনলাইটার: যারা ফুলটাইম চাকরি করে এবং এর পাশাপাশি আয় করার জন্য ফ্রিল্যান্সিং করেন। যেমন, ইঞ্জিনিয়ার কোনো প্রতিষ্ঠানে ফুলটাইম চাকরি করেও ছুটির দিনগুলোতে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কোডিং রিলেটেড প্রজেক্ট করেন।
  • স্বাধীন ক্রিয়েটর: এরা প্রজেক্টের উপর নির্ভর করে কাজ নেন। তারা নিয়মিত চাকরি করেন না। একটি প্রজেক্ট ১ বছর সময় নিয়ে কাজ করেন এবং একসাথে অনেক কাজ নেন না।
  • টেম্পোরারি ওয়ার্কার: এরা সময় অনুযায়ী চাকরি করেন। যেমন, একটি কোম্পানি ১ মাসে ২০০টি ব্লগ লিখতে চাইলে, তারা ৫-৬ জন ব্লগারকে নিয়ে কাজ করায়।
  • ফ্রিল্যান্সিং কনসালটেন্ট: এরা স্বাধীনভাবে কাজ করেন এবং কোনো ফুলটাইম কাজ করেন না। তারা বিভিন্ন কোম্পানিতে পরামর্শক হিসাবে কাজ করেন।
  • ডাইভার্সিফাইড ওয়ার্কার: এরা একসাথে অনেকগুলো কাজ করতে পারেন।
  • এন্ট্রাপ্রেনিউর ফ্রিল্যান্সার: এরা একটি নির্দিষ্ট স্কিল বা পদের উপর নির্ভর করে কাজ করেন।

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস কি?

মার্কেটপ্লেস হলো এমন একটি মাধ্যম, যা বায়ার এবং ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। বায়াররা তাদের প্রয়োজনীয় কাজ করানোর জন্য দক্ষ ফ্রিল্যান্সারদের খুঁজে নেয়।

মার্কেটপ্লেসে প্রথমে ক্লায়েন্টরা আসে। সেখানে তারা ফ্রিল্যান্সারদের করা বিভিন্ন বিড পর্যালোচনা করে। একটি বিড দেখে বোঝা যায়, ফ্রিল্যান্সার কতক্ষণে একটি কাজ শেষ করতে পারবে এবং কত পারিশ্রমিক নিতে পারে। ক্লায়েন্ট যেটি ভালো মনে করে, সেটি গ্রহণ করে।

বিভিন্ন উপায়ে অর্থ পরিশোধ করা হয়। কাজ শেষ হলে মার্কেটপ্লেস থেকে আপনার উপার্জনের একটি অংশ কেটে নেওয়া হয় এবং বাকিটা আপনার অ্যাকাউন্টে জমা হয়।

ফ্রিল্যান্সিং

জনপ্রিয় কয়েকটি মার্কেটপ্লেস হলো :

যেসব ফিল্ডে কাজ বেশি হয়

  • কম্পিউটার অ্যান্ড আইটি
  • ফাইন্যান্স
  • মেডিকেল অ্যান্ড হেলথ
  • ট্রান্সলেশন
  • রাইটিং
  • এডুকেশন
  • কাস্টমার সার্ভিস
  • এডিটিং
  • হিউম্যান রিসোর্স
  • একাউন্টিং
  • অ্যাডমিনিস্ট্রেশন

ফ্রিল্যান্সিং করতে যা যা প্রয়োজন

 

১. স্কিল

প্রথমেই আপনার স্কিল বিল্ডআপ করতে হবে। একটি নির্দিষ্ট স্কিল শিখতে হবে যেটির মাধ্যমে আপনি সহজে অনলাইনে আয় করতে পারেন। এটি হতে পারে গ্রাফিক ডিজাইন, ডাটা অ্যানালাইসিস, ওয়েব ডিজাইনিং, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, কন্টেন্ট রাইটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং বা এসইও ইত্যাদি।

২. কম্পিউটার বা ল্যাপটপ

আপনার একটি কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ প্রয়োজন। যদি আপনি প্রোগ্রামিং, ভিডিও এডিটিং বা গ্রাফিক ডিজাইনের মতো কাজ করতে চান, তবে অবশ্যই হাই কনফিগারেশন ডিভাইস প্রয়োজন। অনেকের প্রশ্ন হতে পারে, মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করা যাবে কিনা। হ্যাঁ, মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং সম্ভব, তবে নিয়মিত কাজ করতে হলে একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ প্রয়োজন।

৩. ইন্টারনেট সংযোগ

ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য ইন্টারনেট সংযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি ইন্টারনেট নির্ভর কাজ, তাই আপনার ডিভাইসে অবশ্যই ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে।

৪. পর্যাপ্ত সময়

আপনার হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকা প্রয়োজন। অনেকেই স্কিল প্র্যাকটিস করতে শুরু করে কিছুদিন পর ছেড়ে দেন। এটি করা যাবে না। ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে হলে আপনাকে মনোযোগী হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে।

ক্যানভা ডিজাইন

ক্যানভা একটি ডিজাইন টুল, যা ব্যবহার করে আপনি সহজেই দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিক্যাল কন্টেন্ট তৈরি করতে পারবেন। এটি সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট, পিচ ডেক, স্লাইড, এবং থাম্বনেইল ডিজাইনে সহায়তা করে। ক্যানভার কাজ শিখতে হলে কিছু টিউটোরিয়াল দেখতে হবে। খুব কঠিন কিছু না, কেবল ২টি ধারণা থাকলেই যথেষ্ট: ১. কালার প্যালেট এবং ২. কালার গ্রেডিং।

বেশিরভাগ কোম্পানি ব্র্যান্ডিং এবং কন্টেন্ট ডিজাইনের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে। টার্গেট অডিয়েন্স বুঝে কন্টেন্ট তৈরি করলে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রমোশন কাজ পেতে সুবিধা হবে।

কন্টেন্ট রাইটিং

সোশ্যাল মিডিয়া, ব্লগ, ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন জায়গায় কন্টেন্ট রাইটার প্রয়োজন। এটি অডিয়েন্সকে তথ্য জানাতে এবং এনগেজমেন্ট বাড়াতে সহায়তা করে।

কন্টেন্ট রাইটিং রিলেটেড কাজগুলো হলো: স্ক্রিপ্ট রাইটিং, কপিরাইটিং, বিজনেস রাইটিং, গোস্ট রাইটিং, রিপোর্ট রাইটিং, একাডেমিক রাইটিং, এসইও কন্টেন্ট রাইটিং, ওয়েব কন্টেন্ট রাইটিং, প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন রাইটিং, ইনফোগ্রাফিক রাইটিং, স্পোর্টস রাইটিং, টেকনিক্যাল রাইটিং, সিভি রাইটিং, ইমেইল রাইটিং, পোস্ট রাইটিং, সোশ্যাল মিডিয়া ব্লগ রাইটিং ইত্যাদি।

আপনাদের অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, যাতে আপনাদের লেখার সাথে কোনো কিছু কপি না হয়, এবং ক্লায়েন্ট যে বিষয়ে লেখা চাচ্ছে আপনি সে বিষয়ে লিখবেন। আপনি আরো বেশি চেষ্টা করবেন যাতে ক্লায়েন্টের জন্য লেখাগুলো SEO অপ্টিমাইজ হয়।

প্রুফরিডিং

লেখা পরে ভুল বের করে এবং সেটিকে ঠিক করাকে প্রুফরিডিং বলা হয়। এটি বই বা ভিডিওর যে কোনো স্ক্রিপ্ট হতে পারে। আপনাকে একটি স্ক্রিপ্ট দেওয়া হবে, যা কয়েক হাজার বা লাখ শব্দের হতে পারে। আপনাকে বানান ভুলগুলো ঠিক করতে হবে এবং ব্যাকরণের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

এই কাজের জন্য আপনাকে শব্দ বা পৃষ্ঠার ভিত্তিতে পেমেন্ট দেওয়া হবে। প্রুফরিডার হতে হলে দ্রুত ভুল ধরার ক্ষমতা এবং ব্যাকরণ ও বিরামচিহ্নের ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট

ক্লায়েন্টের কাজ করে দেওয়াটাই হলো ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজ। এটি মূলত একজন অফিস অ্যাসিস্ট্যান্টের মতোই, তবে এটি অনলাইনে করা হয়।

এই কাজের জন্য আপনার যে দক্ষতা থাকা দরকার তা হলো: ওয়েব রিসার্চ, গ্রাফিক্স ডিজাইন, মাইক্রোসফট অফিস সফটওয়্যার সম্পর্কে জ্ঞান, প্রফেশনাল ইমেইল লেখার দক্ষতা, সৃজনশীলতা, সময় ব্যবস্থাপনা, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট এবং কন্টেন্ট রাইটিং এর বেসিক জ্ঞান।

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার

ক্লায়েন্টের বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ম্যানেজ করাই সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের কাজ। এর মধ্যে কোম্পানি ব্র্যান্ডিং, প্রমোশন, কন্টেন্ট ক্রিয়েশন এবং সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং অন্তর্ভুক্ত।

এই কাজের জন্য প্রয়োজন স্ট্র্যাটেজিক নলেজ, ডিজিটাল মার্কেটিং, সৃজনশীলতা, কমিউনিটি ম্যানেজমেন্ট, কাস্টমার সার্ভিস, অ্যানালিটিকস স্কিল এবং বেসিক গ্রাফিক ডিজাইনিং জ্ঞান।

ইমেইল মার্কেটিং

ইমেইল মার্কেটিং হল ডিজিটাল মাধ্যমে পণ্য ও সেবা প্রচারের একটি পদ্ধতি। এর মাধ্যমে প্রোমোশনাল ইমেইল, ইভেন্ট ইনভাইটেশন বা নিউজলেটার পাঠানো হয়।

এই কাজের জন্য প্রয়োজন অডিয়েন্সের ইমেইল আইডি ট্র্যাক করার দক্ষতা, কন্টেন্ট ক্যালেন্ডার তৈরি করার ক্ষমতা এবং সংক্ষিপ্ত ও প্রাসঙ্গিক ইমেইল লেখার যোগ্যতা।

ডাটা এন্ট্রি

ডাটা এন্ট্রি কাজের মধ্যে টাইপিং এবং ডাটা সংগ্রহ অন্তর্ভুক্ত। এটি হার্ডকপি থেকে সফটকপিতে ডাটা স্থানান্তর করার কাজ।

এই কাজের জন্য টাইপিং দক্ষতা, গুগল শিট এবং এক্সেল সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি।

সঠিক স্কিল নির্ধারণ

ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য সঠিক স্কিল বেছে নিতে ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস এক্সপ্লোর করুন এবং কাজের চাহিদা বোঝার চেষ্টা করুন। নিজের আগ্রহের সাথে মিল রেখে স্কিল নির্বাচন করুন এবং নিয়মিত অনুশীলন করুন।

আপনার যদি কপি রাইটিং ভালো লাগে, তবে গুগলে এই বিষয়ে শিখুন এবং আপনার স্কিল উন্নত করুন। Udemy বা Coursera এর মতো প্ল্যাটফর্ম থেকে কোর্স করতে পারেন।

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে প্রবেশের আগে একটি সমৃদ্ধ পোর্টফোলিও তৈরি করুন।

২০২৫ সালে যেসব ফ্রিল্যান্সিং-এর চাহিদা বেশি

ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য আমাদের যা করতে হবে:

  • আপনি কোন ফ্রিল্যান্সিংটি করতে চান তা আগে ঠিক করে ফেলুন।
  • সিদ্ধান্ত নিন যে আপনি ফুলটাইম ফ্রিল্যান্সিং করবেন নাকি প্রজেক্ট নিয়ে সীমাবদ্ধ থাকবেন।

নিশ কি?

নিশ হলো একটি সীমাবদ্ধ বা টপিক বিষয়। নিশ সম্পর্কে আপনার ভালোভাবে ধারণা থাকতে হবে। একটি বিষয় ভালোভাবে
জানতে হবে, কারণ এটি একটি ফ্রিল্যান্সিং-এর মাধ্যম।

ধরুন, আপনি একজন ব্লগ রাইটার। যদি আপনি মেন্টাল হেলথ কেয়ার সম্পর্কে ব্লগ লিখতে পছন্দ করেন, তবে এটিই আপনার নিশ। নিশ ২
ধরনের হয়:

  • মাইক্রো নিশ
  • ব্রড নিশ

নিশ সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি পটেনশিয়াল ক্লায়েন্ট পাওয়ার প্রক্রিয়াটি সহজ করে দেয়।

কাজ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে করণীয়

আপনার বেছে নেওয়া টপিকটির প্রতি আপনার ভালো জ্ঞান ও দক্ষতা থাকতে হবে। যে কাজটি শিখে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন, সেটিই
শিখুন। নিশের চাহিদা ও প্রয়োজন মার্কেটপ্লেসে কেমন তা যাচাই করুন।

ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়ার কৌশল

  • ফেসবুকে ফ্রিল্যান্সিং-রিলেটেড গ্রুপগুলোতে বেশি বেশি সক্রিয় থাকুন।
  • মার্কেটপ্লেসের কোন বিভাগগুলোতে বেশি কাজ হয়, তা খেয়াল করুন।
  • ইন্ডাস্ট্রি ওয়েবিনারে যোগ দিয়ে নেটওয়ার্ক তৈরি করুন।
  • পটেনশিয়াল ক্লায়েন্ট পেতে আপনার স্কিল নিয়ে আলোচনা করুন।

ফুলটাইম চাকরি এবং গিগের ব্যালেন্স

ফুলটাইম চাকরি আপনার বেতনের একটি বড় অংশ সামলে দেয়। তাই আপনাকে দুইটি কাজের মধ্যে ব্যালেন্স রাখতে হবে। কোন কাজের
জনপ্রিয়তা বেশি এবং কোনটি আপনাকে সফল করতে পারে, সেদিকে নজর দিন।

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার স্টেপ বা ধাপ সমূহ

  • প্রয়োজনীয় ডিভাইস ও ইন্টারনেট: ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য অবশ্যই একটি ভালো ডিভাইস এবং ইন্টারনেট সংযোগ থাকা জরুরি। কারণ, কাজ খোঁজা থেকে শুরু করে ক্লায়েন্ট খুঁজে আনা, কাজ জমা দেওয়া—সবটাই ইন্টারনেটের মাধ্যমে হবে।
  • যথাযথভাবে একটি স্কিল শিখুন: একসাথে অনেকগুলো স্কিল না শিখে, ধৈর্য নিয়ে একটি স্কিল শিখে কাজ শুরু করুন। কম সময় নিয়ে অনুশীলন করলে দক্ষতা অর্জন সম্ভব নয়। সঠিক স্কিল নির্বাচন নিয়ে আগেই আলোচনা করা হয়েছে।
  • স্কিলভিত্তিক প্রোজেক্ট করে পোর্টফোলিও তৈরি করুন: ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট তৈরি করার সাথে সাথে পোর্টফোলিও তৈরি করুন। যদি আগের কাজের স্যাম্পল না থাকে, তবুও পোর্টফোলিও তৈরি করুন। পোর্টফোলিও ভারি করার জন্য স্থানীয় মার্কেটে কাজ করুন।
  • ভালো মানের পোর্টফোলিও: পোর্টফোলিও না থাকলে অনেক ফ্রিল্যান্সারের কাজ ক্লায়েন্টরা এড়িয়ে চলেন। পোর্টফোলিওতে কাজের নমুনা, ছবি এবং কাজের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিন। যদি সম্ভব হয়, নিজের ওয়েবসাইট খুলে পোর্টফোলিও সেখানে দিন।
  • প্রতিনিয়ত প্র‍্যাকটিস করুন: দক্ষতা অর্জন করার জন্য অনুশীলন করতে হবে। কোর্স, ব্লগ পড়া বা ইউটিউব ভিডিও দেখে শিখতে পারেন। তারপর নিজের কাজ নিজে করে, সমস্যায় পড়লে গুগল থেকে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করুন।
  • মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট খুলুন: দক্ষতা অর্জন করার পর ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজ শুরু করতে একাউন্ট খুলুন।

ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে আপনার একটি বায়োডাটা প্রয়োজন

ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে আপনার একটি বায়োডাটা প্রয়োজন। যেটা দেখলে মানুষ আপনার সম্পর্কে জানতে পারবেন। এই বায়োডাটাটাই হলো আপনার ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসের একাউন্ট বা প্রোফাইল। আপনার প্রোফাইলটিকে এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে আপনি যখন বিড করবেন অর্থাৎ কাজের আবেদন করবেন, তখন ক্লায়েন্ট আপনার প্রোফাইল দেখেই আকৃষ্ট হয়। সেক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে:

  • প্রোফাইল পিকচার: আপনার প্রোফাইলে ঢুকে সবার আগে যা চোখে পড়ে তা হচ্ছে আপনার ছবি। প্রোফাইল পিকচার হিসেবে ফরমাল ছবি ব্যবহার করুন। আপনার স্কিল অনুযায়ী ডেসক্রিপশন লিখবেন। বানিয়ে কিছু লেখার দরকার নেই। আপনি যে বিষয়ে এক্সপার্ট, সে বিষয়ে লিখুন এবং কাজের স্যাম্পল যুক্ত করুন।
  • স্কিলের পরীক্ষা: Upwork, Freelancer.com এর মতো জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সিং স্কিল মেজারমেন্ট নামে একটা পরীক্ষা দেওয়া যায়। এগুলোতে অংশগ্রহণ করলে সেটি আপনার প্রোফাইলে বাড়তি সুবিধা যুক্ত করবে। এই টেস্টগুলো বিনামূল্যে দেওয়া যায়। আর আপনি যদি টেস্টে খারাপ করেন তাহলে চাইলে ফলাফলটা লুকিয়ে ফেলতে পারবেন এবং আবার ১৪ দিন পরে পরীক্ষা দিতে পারবেন।
  • বুঝেশুনে রেট লিখুন: আপনি কী রকম প্রতি ঘণ্টা রেটে কাজ করতে আগ্রহী, তা ক্লায়েন্ট আপনার প্রোফাইলে দেয়া ঘণ্টা প্রতি রেট থেকে বুঝতে পারে। এটা ভেবেচিন্তে লিখুন।
  • ভুল তথ্য দিবেন না: একাউন্ট তৈরির সময় কোনো প্রকার ভুল তথ্য দিবেন না। আপনার একাউন্টের নাম, এনআইডি এবং ব্যাংক একাউন্ট সব জায়গায় নাম, জন্ম তারিখ ইত্যাদি একই হতে হবে।

কাজ অনুসন্ধান এবং আবেদন

শুধু একাউন্ট খুলে বসে থাকলেই হবে না, আপনাকে কাজের অনুসন্ধান করতে হবে এবং সেই সাথে কাজের জন্য আবেদনও করতে হবে।

প্রথম কাজের ক্ষেত্রে যেই কাজে আপনি দক্ষ, সেই কাজের জন্যই আবেদন করুন। খুব সতর্কতার সাথে কাজটি করুন যাতে ক্লায়েন্ট আপনাকে নেগেটিভ রিভিউ না দেয়। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে দুই ধরনের কাজ আছে—একটি হলো প্রজেক্ট ও টাস্ক বেসিস এবং অন্যটি হলো আওয়ারলি বেসিস।

শুরুতে টাস্ক বা প্রজেক্ট বেসিসে কাজ করা ভালো। কারণ, একটি কাজ শেষ করতে আপনার ঠিক কতটা সময় লাগবে, সে নিয়ে আপনার এখনো ধারণা থাকতে পারে না। অভিজ্ঞ হওয়ার পরে, যখন আপনি তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করতে পারবেন, তখনই আওয়ারলি বেসিসে কাজ শুরু করতে পারেন।

বিড বা আবেদন করার পদ্ধতি

একেক মার্কেটপ্লেসে কাজের জন্য বিড বা আবেদন করার পদ্ধতি একেক রকম। অনেক জায়গায় মেইলের মাধ্যমে কাজের আবেদন করা যায়। সেক্ষেত্রে যেসব জিনিস মাথায় রাখবেন:

  • খুব বিনয়ের সাথে মেইল লেখা শুরু করুন।
  • অল্প কথায় নিজের স্কিলগুলো তুলে ধরুন।
  • ক্লায়েন্টের জব ডিসক্রিপশন অনুযায়ী তাকে বুঝান যে তিনি যা চাচ্ছেন, আপনার মধ্যে সেসব কোয়ালিটি আছে।
  • তাকে বলুন যে আপনি নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজটি শেষ করে দিতে পারবেন।
  • তিনি যেন আপনার মেসেজ দেখে বুঝতে পারেন যে তিনি যা চাচ্ছেন, আপনি তা ভালোভাবে করতে পারবেন।
  • ক্লায়েন্ট যেই কাজ চাচ্ছেন, সেই কাজ আপনার পোর্টফোলিওতে থাকলে তাকে সেটা দেখান।
  • তারপর বিনয়ের সাথে লেটারটি শেষ করুন। এটা খুব বড় করবেন না।

ফ্রিল্যান্সিং সংক্রান্ত ২০টি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ ও তার ব্যাখ্যা:

১. ক্লায়েন্ট অন-বোর্ডিং: নতুন ক্লায়েন্ট খুঁজে আনার প্রক্রিয়া।
২. ফিডব্যাক: ক্লায়েন্টের পরামর্শ বা মন্তব্য যা কাজের মান উন্নত করতে সহায়ক।
৩. ফলোআপ: ক্লায়েন্টের সাথে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে কাজের অগ্রগতি এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনী আলোচনা।
৪. ফ্রিল্যান্স কন্ট্র্যাক্ট: ক্লায়েন্ট এবং ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে কাজের শর্তাবলী নির্ধারণ করা চুক্তি।
৫. গিগ: ফ্রিল্যান্স সার্ভিস বা সেবা যা একটি ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে অফার করা হয়।
৬. আওয়ারলি রেট: প্রতি ঘণ্টায় ফ্রিল্যান্সারের চার্জ করা পরিমাণ।
৭. ইনভয়েস: কাজের জন্য পেমেন্ট প্রদানের জন্য একটি বিল বা চালান।
৮. লিড জেনারেশন: নতুন পটেনশিয়াল কাস্টমার বা ক্লায়েন্ট খুঁজে আনার প্রক্রিয়া।
৯. পিচ: ক্লায়েন্টকে নিজের কাজ বা সার্ভিসের প্রেজেন্টেশন বা প্রস্তাব।
১০. পোর্টফোলিও: ফ্রিল্যান্সারের কাজের নমুনা বা অভিজ্ঞতার একটি সংগ্রহ।
১১. রিটেইনার: কাজের শুরুতে ক্লায়েন্ট কর্তৃক প্রদান করা অগ্রিম অর্থ যা কাজের জন্য বুকিং হিসেবে ব্যবহার হয়।
১২. টেস্টিমোনিয়াল: ক্লায়েন্টের অভিজ্ঞতা ভিত্তিক মন্তব্য বা প্রশংসাপত্র।
১৩. টাইম ট্র্যাকিং: কাজের সময় নির্ধারণ বা রেকর্ড করা, সাধারণত আওয়ারলি রেট ব্যবহৃত হলে।
১৪. কনফিডেনসিয়াল ক্লজ: এমন একটি শর্ত যা কন্ট্র্যাক্টে থাকে এবং যা তৃতীয় পক্ষকে জানানো যাবে না।
১৫. কন্সাল্টেশন: ক্লায়েন্ট এবং ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে পেইড পরামর্শ সেবা।
১৬. ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি (আইপি) রাইটস: মেধাস্বত্বের অধিকার যা প্রজেক্টের শেষে ক্লায়েন্ট বা ফ্রিল্যান্সারের কাছে থাকবে।
১৭. কিল ফি: ক্লায়েন্ট কাজ বাতিল করলে ফ্রিল্যান্সারকে প্রদেয় অর্থ।
১৮. লেট ফি: নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে পেমেন্ট না দিলে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান।
১৯. ফিডব্যাক লুপ: ক্লায়েন্ট এবং ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে কাজের মান উন্নত করার প্রক্রিয়া।
২০. কোল্ড ইমেইল: এমন একটি ইমেইল যা আপনি ক্লায়েন্টদের কাছে পাঠান, যারা এখনও আপনার সেবা চায়নি।

আপনার জন্য কোন ফ্রিল্যান্সিং প্রজেক্টটি সঠিক, তা নির্ধারণ করবেন কিভাবে

ফ্রিল্যান্সিং

ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে আপনি অনেকধরনের প্রজেক্ট বা গিগের সন্ধান পাবেন। কিন্তু তার মধ্যে থেকে কোনটা আপনার জন্য মানানসই, তা আপনাকে বুঝেশুনে খুঁজে বের করতে হবে। কারণ সব চাকরি আপনার মনমতো নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে যেসব বিষয় মাথায় রাখতে পারেন:

প্রজেক্ট রিকোয়ারমেন্টে কী কী আছে:

প্রথমেই দেখুন প্রজেক্ট ডেস্ক্রিপশনে কোন কোন জিনিস থাকার কথা বলা রয়েছে। রিকোয়ারমেন্টে মূলত প্রয়োজনীয় স্কিল, অভিজ্ঞতা এবং রিসোর্সের কথা বলা থাকে। একইসাথে ডেডলাইনও উল্লেখ করা থাকে। এগুলোর সাথে যদি আপনার স্কিল ও অভিজ্ঞতার মিল থাকে, পর্যাপ্ত সময় আপনার হাতে থাকে এবং আপনি যদি মনে করেন যে হ্যাঁ, এই কাজটা নিলে আমি ক্লায়েন্টকে সন্তুষ্ট করতে পারব, তাহলেই আবেদন করুন।

টাকা-পয়সা ছাড়া এই কাজ থেকে কী কী সুবিধা পেতে পারেন:

ফাইন্যান্সিয়াল সুবিধাদি বাদে এই প্রজেক্ট থেকে আপনি আর কী কী সুবিধা পেতে পারেন সেটা চিন্তা করুন। যদি এইটা কোন লং-টার্ম প্রজেক্ট হয়, তাহলে এটা করতে যেয়ে আপনি নতুন কোন স্কিল শিখতে পারবেন নাকি, আপনি আলাদা কোন সম্মান পাবেন নাকি না ইত্যাদি। যেমন, আপনি হয়তো টেক ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন। এখন আপনি এমন কোন এজেন্সির কাজ পেলেন, যারা এই নিশের মানুষের কাছে বেশ পরিচিত। তাই তাদের কাজটা করলে কিন্তু আপনার পোর্টফেলিও বেশ ভারি হবে, তাদের মাধ্যমে অনেকেই আপনার কাজের কথা জানবে।

মানসিক শান্তি সবার আগে:

এমন কোনো কাজ করবেন না, যা আপনার দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ধরা যাক একটা ১২ ঘণ্টার ক্লিপ দেখে ভিডিও এডিট করতে আপনার ন্যূনতম ৩ দিন সময় লাগবে। সেখানে আপনাকে বলা হলো ৬ ঘণ্টার মধ্যেই পুরো ভিডিও এডিট করে জমা দিতে হবে। তাহলে কিন্তু আপনার উপর অমানুষিক চাপ পড়বে এবং এই কাজটা করা হয়তো সম্ভবও নয়। তাই এমন কাজ এড়িয়ে চলবেন।

আপনি যদি ফুলটাইম চাকরি করে থাকেন, তাহলে দেখুন চাকরি ম্যানেজ করার পাশাপাশি ছোটখাটো গিগ নেওয়া যায় নাকি।

যদি ফুলটাইম চাকরির কাজের চাপ কম থাকে, তাহলে ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ারের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন। তবে দুটোই সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে করতে হবে।

ক্লায়েন্ট কী চান তা উনি নিজে জানেন কিনা:

অনেকসময় অনেক জব ডেস্ক্রিপশন পড়ে ঠিকমতো বোঝা যায় না যে ক্লায়েন্ট আসলে কী চান। তাই যেসব ডেস্ক্রিপশনে পরিপাটি ক্লায়েন্টের সব চাহিদার কথা উল্লেখ করা থাকবে, সেগুলোই নির্বাচন করুন। যাতে ব্রিফ দেখলেই আপনি প্রজেক্টের আউটকামটা কল্পনা করতে ফেলতে পারেন। এতে করে দুই পক্ষেরই সময় বাঁঁচবে। নাহলে অযথা ক্লায়েন্ট ফিডব্যাক দিতে থাকবেন এবং আপনাকে সে অনুযায়ী এডিট করতে হবে। এটা বিশেষ করে গ্রাফিক ডিজাইনার বা ভিডিও এডিটরদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। ক্লায়েন্ট ঠিকমতো প্রজেক্টটা সম্পর্কে না জানার কারণে ডিজাইনারকে ঠিকমতো নির্দেশনা দিতে পারেন না, ফলে ডিজাইনারও তার মনমতো কাজ করতে পারেন না।

অন্য ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে তিনি কী বলেছেন:

ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে গেলে আপনার ক্লায়েন্ট অন্য ফ্রিল্যান্সারদেরকে কী রেটিং বা ফিডব্যাক দিয়েছেন, সেগুলো দেখতে পারেন। এতে করে বুঝবেন যে তিনি ঠিক কত সময় ধরে এখান থেকে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন এবং অন্য ফ্রিল্যান্সারদের কাজ নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট নাকি। যদি ১০টার মধ্যে ৮টা ফিডব্যাকই নেতিবাচক হয়, তাহলে বুঝতে হবে এই ক্লায়েন্টকে সন্তুষ্ট করা একটু কঠিনই বটে!

ডেডলাইন চেক করুন:

তাড়াহুড়ো করে কোনো কাজ না নিয়ে, হাতে সময় রেখে ঠিকমতো কাজটা শেষ করুন। কারণ তাড়াহুড়ো করতে যেয়ে কোনো ভুল করে বসতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার পুরো পেমেন্ট আটকে যেতে পারে কিংবা নেগেটিভ রিভিউ পেতে পারেন। আমরা সবসময় যেই ভুলটা করি সেটা হলো দ্বিগুণ রেট দেখে কাজটা লুফে নেই। কিন্তু ডেডলাইন যে সাধারণ সময়ের চেয়ে অর্ধেক থাকে, সেটা খেয়াল করি না। সৃজনশীল কাজের ক্ষেত্রে কম সময়ে হয়তো মাথায় ভালো কোনো আইডিয়া নাও আসতে পারে। এজন্য এসব কাজ হাতে সময় রেখে করা উচিত।

 

কিভাবে বুঝবেন যে আপনি ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য প্রস্তুত:

ফ্রিল্যান্সিং

এতক্ষণ তো ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে অনেককিছুই জানা হলো। কিন্তু আপনি কি আদৌ এই ক্যারিয়ার গড়ার জন্য প্রস্তুত? নাকি এখনো মনের মধ্যে একটু কনফিউশন আছে। দেখুন তো, নিচের পয়েন্টগুলো পড়ে কনফিউশন দূর হলো নাকি!

কারো অধীনে কাজ করা আপনার পছন্দ না:

ফ্রিল্যান্সিং এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এখানে আপনি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন। তাও আবার দিনের যেকোনো সময়ে যেকোনো জায়গায় বসে। অফিসে কাজ করতে গেলে দেখা যায় যেই কাজ পছন্দ না, সেই কাজও করতে হচ্ছে। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং করলে আপনি আপনার পছন্দমতো কাজ বাছাই করে সেটা সম্পন্ন করতে পারবেন।

আপনি সবসময় আরো ভালো করার সুযোগ খোঁজেন:

আপনি যদি কাজ করতে যেয়ে নতুন স্কিল শিখতে চান বা আগের চেয়ে আরো ভালো করতে চান, সেক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং পেশা আপনার জন্য মানানসই।

আপনার যদি আসলেই কোনো স্কিলের প্রতি দক্ষতা থাকে:

ফ্রিল্যান্সিং জবের চাহিদা যেমন বেশি, এখানে প্রতিযোগিতাটাও বেশি। তাই এখানে কাজের অর্ডার পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই অন্যদের থেকে ভালো হতে হবে।

ফুলটাইম ও পার্টটাইম চাকরির ব্যালেন্স করা জানতে হবে:

আপনি যদি এই দুই প্রকার চাকরির মধ্যে ব্যালেন্স না করতে পারেন, তাহলে কিন্তু ভালোই বিপদে পড়বেন। একদিকে আপনার বস আপনার প্রতি রাগ হবেন, অপরদিকে আপনার ক্লায়েন্ট আপনাকে নেগেটিভ রিভিউ দিয়ে চলে যাবে।

নেগোসিয়েশন স্কিল থাকতে হবে:

ফ্রিল্যান্স সেক্টরে নেগোসিয়েশন করতে পারা খুবই ভালো একটি স্কিল। কারণ অনেকসময় দেখা যায় যে ক্লায়েন্টরা হয়তো উপযুক্ত পারিশ্রমিক দিতে চান না। তখন আপনাকে তাদের সাথে কথা বলে একটি সমঝোতায় আসতে হবে যাতে দুই পক্ষেরই লাভ হয়।

কখন হ্যাঁ বলা উচিত আর কখন না বলা উচিত তা আপনি জানেন:

ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার জানা উচিত যে কখন কোন কোন কাজকে হ্যাঁ বলা উচিত, আর কোন কাজগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।

একইসঙ্গে একাধিক জায়গায় কাজ করতে চান:

সাধারণ চাকরিজীবীরা একসাথে একাধিক জায়গায় কাজ না করতে পারলেও, ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এই সুযোগটা রয়েছে। কারণ এটা মূলত চুক্তিভিত্তিক কাজ। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে দিতে পারলেই হলো।

সবসময় কাজ নাও পেতে পারেন:

ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে কখনো অনেক কাজ থাকতে পারে, কখনো আবার কোন কাজই থাকে না। এতে করে যারা শুধু ফ্রিল্যান্সিং করেন, তাদের আয়ের ধারাবাহিকতাটা আর থাকে না। এমনকি বেতনের ক্ষেত্রেও একটা ঝুঁকি কাজ করে যে কোনো স্ক্যামারের পাল্লায় পড়লেন কিনা। এভাবে কাজের সংকটে পড়তে পারেন। তাই সবকিছু দেখে শুনেই কাজ নেওয়া উচিত।

শেষ কথা

আজ থেকে ৪ বছর আগে, যখন আমি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করি, তখন মনে হয়েছিলো যে সফলতা পাওয়া কঠিন। তবে বর্তমানে আমি ফাইভার মার্কেটপ্লেসে লেভেল ২ সেলার এবং প্রচুর সফল প্রজেক্ট সম্পন্ন করেছি। এই সফলতার জন্য আমি দিনের পর দিন পরিশ্রম এবং ধৈর্য ধরেছি। ফ্রিল্যান্সিং একটি দীর্ঘ যাত্রা, যেখানে আপনি সফলতার শিখরে পৌঁছানোর জন্য কঠিন পরিশ্রম ও সময় দিতে হবে। তবে একবার যদি আপনি নিজের স্কিল উন্নত করেন এবং ঠিকভাবে কাজ করতে থাকেন, তাহলে আপনি নিশ্চিতভাবেই সফল হবেন। আশা করি, আমার এই অভিজ্ঞতা আপনাদের জন্য সহায়ক হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top